শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

আটঘরিয়া উপজেলার পটভূমি ও ঐতিহ্য

উপজেলার পটভূমিঃ
উপজেলার নামকরণঃ
আটঘরিয়া উপজেলার নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। জানা যায়, তৎকালে সর্বপ্রথম এই এলাকায় আট ব্যক্তি বসতবাটি নির্মাণ করে বসবাস করতে থাকলে আট ঘর বসতি থেকে আটঘরিয়া নামের উৎপত্তি ঘটে । অপর একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ভারত উপ-মহাদেশের চন্দ্রগুপ্তের শাসনামলে (খ্রিঃ পূর্ব ৩০০-৩২৪) ‘‘ বঙ্গ বিভাগ’’ নামে যে এলাকা ছিল পাবনা ছিল তার অন্তর্ভূক্ত। তৎকালে এখানে ‘‘ পোদ জাতি’’ এর মধ্যে থেকে আট ঘর বসতি গড়ে উঠায় নাম হয় আট ঘর এলাকা বা আটঘরিয়া ।
কারো কারো মতে ১৮৫৭ খ্রিঃ সিপাহী বিদ্রোহ সংগঠিত হলে বিদ্রোহের অপরাধে আট জন সিপাহীকে এই এলাকার দ্বীপে নির্বাসনে দেয়া হয়। নির্বাসিত সিপাহীগণ পরবর্তীতে সেখানে বসবাস করতে থাকে। নির্বাসিত ৮ জন সিপাহী ৮টি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করায় স্থানটির নাম হয় আটঘরে বা পরে আটঘরিয়া।
সন তারিখ যাই হোক না কেন এই এলাকায় আট ঘর বসতি থেকে যে আটঘরিয়া নামের উৎপত্তি হয়েছে এতে সন্দেহ নেই।

উপজেলার ভৌগলিক অবস্থানঃ
আটঘরিয়া উপজেলা পাবনা জেলার একটি ছোট উপজেলা। এটি পাবনা-চাটমোহর সড়কের পার্শ্বে পূর্বদিকে এবং পাবনা জেলা সদরের উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। এর উত্তরে চাটমোহর, ভাংগুড়া এবং ফরিদপুর উপজেলা, দক্ষিণ-পূর্বে পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলা, পূর্বে সাঁথিয়া উপজেলা এবং পশ্চিমে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলা অবস্থিত।

বর্তমান উপজেলার ইতিহাসঃ
পাবনা জেলার একটি উপজেলা আটঘরিয়া। ঐতিহাসিকদের মতে মহাভারত বিরোচিত পান্ডবভ্রাতাগনের রাজত্ব ছিল এই অঞ্চলে। কোন এক সময় পান্ডবগন পাবনার মাটিতে যজ্ঞ করেছিলেন। তখন থেকে এই অঞ্চলটি পাবনা নামে পরিচিত। পাবনার উত্তরে বৃহৎ চলন বিল যা চাটমোহরের দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। পশ্চিম- দক্ষিণে পদ্মা নদী এবং পূর্বদিকে যমুনা নদী প্রবাহিত ছিল। মোট কথা পাবনার প্রায় গোটা অঞ্চল ছিল জলমগ্ন। ভূ-প্রকৃতির গঠন হিসেবে তখন পাবনা মূল ভূ-খন্ডের অসিতত্ব ছিল যে স্থানে তা ঈশ্বরদীর কিছু অংশসহ গোটা আটঘরিয়া যা পদ্মার শাখা চন্দ্রবতী নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত ছিল।
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়- অতীতে পাবনা জেলায় চোর-ডাকাতের চরম উৎপাত ছিল। বিশেষ করে বৃহৎ চলনবিল অঞ্চলের ডাকাতদল রত্নাই ও চন্দ্রাবতী নদী হয়ে দক্ষিণ অঞ্চলে অবাধে চলাফেরা করতো এবং প্রায়ই ডাকাতিতে লিপ্ত হতো। এলাকার জান-মাল রক্ষার্থে প্রথমে আটঘরিয়াতে একটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়। পরবর্তীকালে আটঘরিয়ার মৃত লালন সিংহের স্ত্রী মাতঙ্গিনী সিংহ ১১ বিঘা জমি দান করেন। উক্ত জমির উপরই ১৯৩৪ সালে আটঘরিয়া থানা(পুলিশ স্টেশন) ভবন নির্মান হয়। পাবনা জেলা শহরের ১৩ কিঃমিঃ উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই আটঘরিয়া উপজেলা


১৯৬২ সালে দেবোত্তর ও কর্ন্দপপুর মৌজায় ১৯.২২ একর জমির উপর থানা প্রশিক্ষন ও উন্নয়ন কেন্দ্র (ঢিটিডিসি) গড়ে উঠে। ১৯৮৩ সালে প্রশাসনিক কাঠামোর পরিবর্তনের ফলে আটঘরিয়া থানাকে উপজেলায় রূপান্তরিত করা হয় এবং ১৪ সেপ্টেম্বর/১৯৮৩ খ্রিঃ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে আটঘরিয়া উপজেলার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়।


উপজেলার সার্বিক তথ্যাদিঃ
আটঘরিয়া উপজেলা চারটি মৌজা নিয়ে দেবোত্তর নামক স্থানে অবস্থিত। এর আয়তন ৫.৯৩ বর্গ কিলোমিটার। মোট জনসংখ্যার ৫১.৪১% পুরুষ এবং ৪৮.৫৯% মহিলা। তবে প্রাচীনকাল থেকেই এ উপজেলায় বাগদি ও বুনোরা নামক আদিবাসীরা উপজেলার ধলেশ্বর ও খিদিরপুরে বসবাস করে আসছে মূলতঃ কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতি এ উপজেলার মূল চালিকা শক্তি। এ উপজেলার মানুষের প্রধান পেশা কৃষি যা মোট জনসংখ্যার ৪৬.১৭%। বর্তমানে এ উপজেলার মানুষ শুধু কৃষির উপর নির্ভরশীল না হয়ে বিভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছে। অন্যান্য পেশার মধ্যে হাঁস-মুরগীর খামার, দুগ্ধ খামার, গরু-ছাগল পালন ও তাঁত শিল্প অন্যতম। উৎপাদিত ফসলের মধ্যে ধান, পাট, ইক্ষু, পান, কলাই, সরিষা, পিঁয়াজ, রসুন, বেগুন, আলু, কাঁচা মরিচ, পটল উল্লেখযোগ্য। তবে সাম্প্রতিককালে এ উপজেলায় প্রচুর পরিমান সবজি বিশেষ করে সিম এবং মাছ চাষ করা হচ্ছে।


উল্লেখযোগ্য স্থান বা স্থাপনা


কালামনগর(বংশীপাড়া) মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধঃ
আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের সোনাকান্দর ও বংশীপাড়া গ্রামের মাঝখানে চন্দ্রাবতী নদীর ঘাট। এ ঘাটেই ৬ নভেম্বর, ১৯৭১ সালে সংগঠিত হয়েছিল এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ । এ যুদ্ধ জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

বেরুয়ান জামে মসজিদঃ

চাঁদভা ইউনিয়নের বেরুয়ান নামক স্থানে একটি প্রাচীন মসজিদ আছে। স্থানীয় জনগনের ভাষ্য মতে মসজিদটি আনুমানিক ৩০০ বছর আগে নির্মিত হয়েছে মর্মে জানা যায়। বেরুয়ান জামে মসজিদখিদিরপুর জমিদারের কাচারীবাড়ী,খিদিরপুর, মাজপাড়া





উপজেলার ইউনিয়নের নাম ও ইউপি চেয়ারম্যানগণের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর


নাম
পদবী
ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর
জনাব মোঃ আব্দুল গফুর প্রামানিক
চেয়ারম্যান
মাজপাড়া ইউ.পি
গ্রাম-রামচন্দ্রপুর ডাকঘর -খিদিরপুর উপজেলা-আটঘরিয়া
জেলা-পাবনা পোস্ট কোডঃ ৬৬১০ মোবা- ০১৭১১-১১৪৩০৭
জনাব মোঃ আমিনুল হক
চেয়ারম্যান
চাঁদভা ইউ.পি
গ্রাম-আটঘরিয়া ডাকঘর -চাঁদভা উপজেলা-আটঘরিয়া
জেলা-পাবনা পোস্ট কোডঃ ৬৬১০মোবা-০১৭১২-৭৬১৬৬২
জনাব মোঃ শহীদুল ইসলাম শহীদ
চেয়ারম্যান
দেবোত্তর ইউ.পি
গ্রাম-মতিগাছা ডাকঘর -মতিঝিল বাজার উপজেলা-আটঘরিয়া জেলা-পাবনা পোস্ট কোডঃ ৬৬১০ মোবা-০১৭১৭-২৯৫৩৫৫
জনাব মোঃ আতাউর রহমান রানা
চেয়ারম্যান
একদন্ত ইউ.পি
গ্রাম-কদিমবগদি ডাকঘর -শিবপুর উপজেলা-আটঘরিয়া
জেলা-পাবনা পোস্ট কোডঃ ৬৬০০মোবা-০১৭১২-১১৮৪২৯
জনাব মোঃ আব্দুল গফুর মিয়া
চেয়ারম্যান
লক্ষ্মীপুর ইউ.পি
গ্রাম-বাঐকোলা ডাকঘর -ধানুয়াঘাটা উপজেলা-আটঘরিয়া
জেলা-পাবনা পোস্ট কোডঃ ৬৬১০মোবা-০১৭১৯-৮২৪৭১৬


   
এক নজরে আটঘরিয়া উপজেলা


উপজেলার নাম
আটঘরিয়া
আয়তন
১৮৬.১৫ বর্গ কিলোমিটার
জনসংখ্যা অনুযায়ী)
১,৩৮,৪৭৬ জন (২০০১ সনের আদম শুমারী
ঘনত্ব
৮২১ জন প্রতি বর্গ কিঃমিঃ
নির্বাচনী এলাকা
৭১ পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া)
ইউনিয়ন
০৫টি
পৌরসভা
০১ টি
খানা
২৯,৫৭৫
মৌজা
১১১ টি
গ্রাম
১৩০ টি
সরকারী হাসপাতাল
০১ টি
স্বাস্থ্য কেন্দ্র/কিলনিক
১৭ টি
পোষ্ট অফিস
০৫ টি
নদ-নদী
০৩ টি (চিকনাই, চন্দ্রাবতী ও রত্মাই)
হাট-বাজার
১১ টি
ব্যাংক
০৭ টি
মহাবিদ্যালয়
০৭ টি
উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
২০ টি
নিমন মাধ্যমিক বিদ্যালয়
০৪ টি
সিনিয়র মাদ্রাসা
০৩ টি
দাখিল মাদ্রাসা
১৫ টি
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ঃ
৪৪ টি
রেজিঃ বে-সরকারী প্রাথমিক বি
২৯ টি
মসজিদ
১৬১ টি
এতিমখানা
১০ টি



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন